বালুকাময় সৈকত, চোখ ধাঁধানো
প্রবাল, মিষ্টি পানির উপহ্রদ, দৃষ্টিনন্দন ঝরনা, নারকেল গাছের দোল খাওয়া ও স্ফটিক স্বচ্ছ
পানি- এক ছুটে এই গ্রীষ্ম কাটানোর জন্য এই থাই দ্বীপটিই হতে পারে আপনার আদর্শ গন্তব্য।
শুধু কল্পনা করুন, দারুন
এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যে ছাওয়া দ্বীপে চলে গেছেন- উপকূলজুড়ে পাম গাছের সারি
এবং উপকূলীয় নিচুভূমিগুলোতে নারকেল ও অন্যান্য ফলের বাগানটা ধীরে ধীরে উঠে গেছে গ্রানাইট
পাথরে ছাওয়া একটি বিশালাকায় ভূমিতে, যার ঢালটা আবার ছেয়ে আছে এক কুমারি ঘনজঙ্গলে। শুনতে
আদর্শ জায়গার মতো শোনায়, বিশেষ করে দ্রুত গ্রীষ্ম কাটানোর জন্য, নয় কি? ভাল কথা, আপনি
যদি সূর্য, সমুদ্র ও বালি ভালবাসেন- তবে এর সঙ্গে এক চিমটি রোমাঞ্চ জুড়ে দিতে চাইলে
কো সামুই হলো ছুটি কাটানোর এমন এক গন্তব্য, যার স্বপ্ন আপনি বেশ কিছু দিন ধরেই দেখে
আসছেন। থাইল্যান্ডের ক্রা ইসথমাসের পূর্ব উপকূলে এর অবস্থান।
যা কিছু আছে
কো সামুই-এর উচ্চারণ অনেকটা
গ এর মতো (ভারি গলায় ইংরেজি স্বরবর্ণ ও ইউ এর মতো)। এই দ্বীপটি থ্ইাল্যান্ডের উপসাগরীয়
অঞ্চলের চুমফোন দ্বীপমালায় অবস্থিত। ব্যাংকক থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং থাইল্যান্ডের
দক্ষিণাঞ্চলের পূর্ব উপকূল থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে। ২৪৭ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে থাকা সামুই
থাইল্যান্ডের মধ্যে দ্বিতীয় ও চুমফোন দ্বীপপুঞ্জের ৮০টি দ্বীপের মধ্যে (বেশিরভাগই জনবসতিহীন)
সবচেয়ে বড় দ্বীপ। এখানেই গড়ে উঠেছে আং থং ন্যাশনাল মেরিন পার্ক। কায়াকিং ও ¯œরকেলিংয়ের
স্বর্গও বলা যায় এাঁকে।
তো, সেখানে পৌঁছানোর পর
কী কী করবেন আপনি? ২৫ কিলোমিটার লম্বা ও ২১ কিলোমিটার চওড়া এই সামুই দ্বীপ রোমাঞ্চপ্রিয়
ও ফিট শরীরের মানুষগুলোর সিরিয়াস অভিযানের জন্য যথেষ্ট বড় বটে। তবে একখানা মোটরবাইক
বা কারে চড়ে পুরো দ্বীপটাকে চক্কর দিতে সময় লাগবে বড়জোর কয়েক ঘণ্টা। কো সামুইয়ের যেকোনও
জায়গা থেকেই মোটরবাইক ভাড়া নিতে পারবেন। সারা দিনের জন্য ভাড়া গুনতে হবে ১২০ থেকে ৭০০
বাথের মধ্যে। ভাড়াটা নির্ভর করে গাড়ির আকার ও মৌসুমের ওপর (একটি ছোট ১২৫ সিসির মোটরবাইকের
ভাড়া ২০০ বাথের বেশি হওয়ার কথা নয়)।
কারের কথা বলতে গেলে, এখানে
ভাড়া করার অনেক সুযোগই আছে। বাজেট ও অ্যাভিসের মতো আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর স্থানীয়
প্রতিনিধিরা আছে। ভাড়াটা একটু বেশিই মনে হতে পারে (সারা দিনের জন্য ছোট একটা গাড়ির
ভাড়া ৮০০ থেকে ১৫০০ বাথ), তবে ছোটখাট একটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি হিসেবে ভাড়াটা ঠিকই
আছে।
সৈকতের জীবন
সামুইতে আসার বড় কারণটা
হলো সৈকতগুলোকে উপভোগ করা। সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিক সৈকতগুলো হলো চাওয়েং ও লামাই।
অন্যদিকে উত্তরের সৈকতগুলো ও তাদের নিকটবর্তী গস্খামগুলো- মাই নাম, বোফুত, ব্যাং রাক
(বড় বুদ্ধ) ও চোয়েং মন হলো অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি স্থান। পশ্চিম উপকূলের সৈকতগুলো এখনও
তুলনামূলকভাবে একেবারেই শান্ত।
কোমল পানীয় হাতে সৈকতের
ধারে শুয়ে সামনে দিয়ে পর্যটকদের অলস গতিতে হেঁটে যাওয়া দেখার চেয়ে এই দ্বীপে আসলে খুব
বেশি কিছু করার নেই। লামাইতে থাকা কয়েক জোড়া পাথর হয়তো কিছু পর্যটককে বেশ চমৎকৃত করবে।
আর ব্যাং রাক-এ পাওয়া যাবে একটা অতিকায় বুদ্ধ মূর্তি, তবে বর্ণনা পাওয়া যাবে না ওটার।
আর রয়েছে অল্ববিস্তর আকর্ষণ করার মতো কিছু ঝরনা (না মুয়াং নামে পরিচিত)।
আয়েশ করার পালা চুকিয়ে
নেবার পর, পার্শ্ববর্তী আং থং ন্যাশনাল মেরিন পার্ক অথবা কো তাও-এ নিজেকে সঁপে দিতে
পারেন ডাইভিংয়ে- যেহেতু সামুইয়ের বালুকাময় সৈকতগুলোকে দেখার বিষয়টা খানিকটা দুর্বল।
সারা দিনের ডাইভিংয়ের ট্রিপের জন্য ডাইভ শপগুলোতে বুক করতে পারেন। এদের বেশিরভাগই চাওয়েং
ভিত্তিক। বোফুত ও ব্যাং রুক-এর জেটি থেকেই সচরাচর ডাইভিং বোটগুলো ছেড়ে যায়।
দ্বীপের অন্যান্য আকর্ষণের
মধ্যে রয়েছে লায়েম সেট ও থং তাখিয়াংয়ের প্রবাল প্রাচীর; পার্শ্ববর্তী প্রজাপতির বাগান
ও একুয়ারিয়াম; একটি সাপের খামার, বোফুতের একটি মাংকি থিয়েটার ও ফ্যান আইজেলের একটি
অতিকায় বুদ্ধের ছবি।
চমৎকার সিফুড
নারকেলের জন্য রীতিমতো
বিখ্যাত সামুই। সবখানেই পাওয়া যাবে এটি; সুস্বাদুও। যেহেতু এটা একটা দ্বীপ, তাই স্বভাবতই
সামুদ্রিক খাবার বেছে নেয়াই উত্তম। মাঝে মাঝে চড়া মৌসুমের সময় তো চাহিদার চেয়ে যোগানই
বেশি থাকে। বড় সৈকতগুলোতে আন্তর্জাতিক রেস্তরাঁ আছে বেশ কয়েকটি। তবে এসবের জন্য ভালো
সুনাম কুড়িয়েছে বোফুত।
তো এটাই হলো গ্রীষ্মটাকে
পরিপূর্ণ করার জায়গা!
No comments:
Post a Comment